বাবা
গ্রাম থেকে বাবাটা এলো শহরে। হাতে একটা টিফিনবক্সে খেজুরের রসের শিন্নি। মায়ের হাতের রান্না।
এবার শীতে ছেলেটা বাড়ি যেতে পারেনি। ঢাকায় অবশ্য এতোটাই ব্যাস্ত যে কেবল এবার না। শেষ সাতটা বছরেই ছেলেটা বাড়ি ফেরেনি। কিন্তু শীত আসা তো আর বন্ধ হয়নি একবারও। খেজুর গাছে রস আসাও বন্ধ হয়নি একটি বছরের জন্যেও। বন্ধ হয়নি ছেলেটার মায়ের ছেলেকে শিন্নি খাওয়াতে না পারার হাহাকার। মায়ের কান্না থামাতেই বাবা’র শহরে আসা।
ছেলের অফিস খুঁজতে খুঁজতে ঠিকানা খুঁজে বের করলেও অফিসের গেইটের কাছে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে এলো। সে বুঝতে পারছিলোনা যে রিসিপশনে ছেলের নাম কি বলে পরিচয় দেবে। বাবু, শিহাব, সায়েম, সায়েম আহমেদ শিহাব নাকি সায়েম স্যার? মানে এইসব বড় বড় অফিসের নিয়মকানুন কি সেটা বাবাটা জানতো না। গাইয়া বাবাটা জানতো না যে ভদ্রপল্লির আচরণ কেমন হওয়া উচিত। আবার এমন কোন বিব্রতকর নামেও ছেলেকে ডাকতে চাইলোনা যা শুনলে ছেলে বিব্রতবোধ করে।
বাবাটা ফিরে যাচ্ছিলো। আমার সাথে রেলস্টেশনে দেখা। বেকায়দার সময়ে স্টেশনে এসেছে ফিরতি ট্রেন খুঁজতে। ট্রেন ছাড়তে আরো দুই ঘন্টা বাকি৷ বাবাটার সাথে কিছুটা কথা হলো। পরিচয় হলো। তারপর সে আমার সামনে তার পলিব্যাগে প্যাচানো টিফিনবক্সটা মেলে ধরে বললো
“বাবা তুমি এই শিন্নিটুক খাইবা? অনেক বেলা হইছে ফিরত নিতে নিতে নষ্ট হইয়া যাইবো। তুমি খাও। আমি গিয়া বাবুর মায়রে কইমুনে যে বাবু খাইছে। বোঝোতো মায়ের মন। বাবু খায়নাই শুনলে দুঃখ পাইবো”
আমি চুপচাপ স্টেশনের ওয়েটিং বেঞ্চে বসেই শিন্নি খেতে শুরু করলাম। নিচের দিকে তাকিয়ে খাচ্ছি। বাবাটার দিকে তাকাতে সাহস হচ্ছেনা। আচমকা চোখ থেকে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো শিন্নির বাটিতে। আমি কিছুটা থমকে গেলাম। তারপরই মাথায় এলো ‘ব্যাপার না, আমি খাবারের সাথে লবন বেশি খাই’।