লকডাউন ও বিবিধ অসুখ

গতরাত থেকে সোবাহান মিয়ার বাচ্চাটার জ্বর। শেষারাতে জ্বর বেড়ে গেলো। করোনার জন্য দেশে লকডাউন চলছে। বাচ্চাটাকে হাসপাতালে নেয়া দরকার, ভোর চারটা থেকে সরকারী ওয়েবসাইটে ডুকে মুভমেন্ট পাস এর জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। সার্ভার স্লো কোনভাবেই ফর্ম ফিলাপ করতে পারেনি। চেষ্টা করতে করতেই সকাল সাতটা। জ্বরের সাথে তিনবার বমিও করেছে। সকাল আটটা পর্যন্ত চেষ্টা করেও মুভমেন্ট পাসের ফর্ম ফিলাপ করতে পারলোনা। একজন পরিচিত ডাক্তারকে কল করে সব বললো। ডাক্তার বাচ্চার অবস্থা শুনে প্রাথমিকভাবে কিছু মেডিসিন লিখে হোয়াটসেপে মেসেজ করে দিলো। বাচ্চার এই অবস্থা কোন বাবার সহ্য হয়? কে পারে ঘরে বসে থাকতে? ডাক্তারের কাছ থেকে ধারনা নিলো মেডিসিনে কতো টাকা লাগতে পারে। ডাক্তার বলেছে ৫০০ টাকার মতো।
মাসের বেতনও হয়নি। বউয়ের কাছ থেকে আর নিজের পকেটের টাকা মিলিয়ে ৫২০ টাকা নিয়ে পথে বের হলো বাচ্চার মেডিসিন কিনতে। রাস্তায় কোন পাবলিক পরিবহণ নেই। অগত্যা পায়ে হেটেই রওনা দিলো লার্জ ফার্মার দিকে। নবোদয় হাউজিং থেকে তাজমহল রোড ২০ মিনিটের পথ কিন্তু ঘরে বাচ্চা অসুস্থ এই টেনশনে সোবাহান মিয়ার রাস্তা আজকে ফুরাচ্ছেই না।
শিয়া মসজিদ মোড়ে আসতেই পুলিশের চেকপোস্ট। থামালো সোবাহান মিয়াকে। দেখতে চাইলো মুভমেন্ট পাস। সোবাহান মিয়া জানালো ভোর চারটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত চেষ্টা করেও একটা মুভমেন্ট পাস না পাবার কথা। সোবাহান মিয়া হোয়াটসেপে ডাক্তারের মেসেজ দেখালো। বাচ্চার অবস্থা বর্ণনা করলো। কিন্তু পুলিশের এক কথা আইনের নড়াচড়া হবে না। আইন অন্ধ। মুভমেন্ট পাস দেখাতেই হবে। সোবাহান মিয়া অনেক অনুনয় করলো কিন্তু কাজ হলোনা। মামলা দেবেই পুলিশ। শেষমেশ পুলিশ যখন সোবাহান মিয়াকে ৫০০ টাকার মামলা দিয়ে দিলো তখন আর থাকতে না পেরে পুলিশের পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো সোবাহান মিয়া। পুলিশের এক কথা আইন অন্ধ। আর পুলিশ কখনো আইনের বাহিরে কিছুই করতে পারেনা।
সকল কান্না, সরকারী সার্ভারের সমস্যা কিছুই সোবাহান মিয়ার বাচ্চার ঔষধের টাকাটা ফেরত দিলো না। যে পথে যাচ্ছিলো সোবাহান মিয়া সেই পথেই তাকে ঘুরিয়ে পাঠিয়ে দিলো তাকে। পকেটে ২০ টাকা আছে।
সোবাহান মিয়া ঘরের দিকে পা বাড়ালো। কিন্তু মনে হচ্ছে পায়ে কেউ পাথর বেঁধে দিয়েছে। বারবার সোবাহান মিয়ার মনে হচ্ছে ‘এই রাষ্ট্র আমার বাচ্চার মুখের ঔষধটাও কাইড়া নিলো!!’
সোবাহান মিয়ার মনে হচ্ছে তার মাথা ঘুরাচ্ছে। গায়ে জ্বর এসেছে মনে হচ্ছে। দুইবার বমি করতে চেষ্টা করে রাস্তার পাশে বসে পড়লো। তারপর আর তার কিছুই মনে নেই।